সহপাঠ্যক্রমিক কার্যাবলীর উদ্দেশ্য নিম্নরূপ
(১) শিক্ষার্থীর চাহিদা- ভিত্তিক বিকাশের সুযোগ দানঃ
শিশুর মধ্যে জন্মগত কতগুলো প্রবণতা থাকে। কোন শিশু হয়ত খেলাধুলা, কেউ বা অভিনয়ে আগ্রহী। শিক্ষকের কাজ হল সেই প্রবণতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে শিশুর সুপ্ত সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ করা। সহপাঠ্যক্রমিক কাজগুলো শিক্ষককে এই দিক থেকে সহায়তা করে। তিনি শিশুর প্রবণতাগুলোকে ঠিকমত কাজে লাগিয়ে শিক্ষণ পরিচালনা করতে পারেন এবং শিক্ষার্থীকে স্কুলে টিকে থাকতে সাহায্য করতে পারেন।
(২)সামাজিক বৈশিষ্ট্য গঠনে সহায়তাঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কাজের মাধ্যমে শিশুর গণতান্ত্রিক সমাজ-জীবনের উপযোগী মনোভাব গড়ে তোলা যায়। বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য হল একদিকে যেমন ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন, অন্যদিকে তেমন সমাজ-জীবনের উপযোগী করে ব্যক্তিকে প্রসত্তত করে দেওয়া। গণতান্ত্রিক সমাজ-ব্যবস্থার মূলকথা হল মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে ক্ষুন্ন না করে পারস্পরিক সহবাস। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের যৌথ কার্যাবলীর (Group activities) মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে এই ধরনের মনোভাব গড়ে ওঠে। খেলাধুলা, যৌথ প্রজেক্ট (Group Project), অভিনয় ইত্যাদির মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে গণতান্ত্রিক ভাবধারা জাগিয়ে, তোলা যায়। তাছাড়া, এন.সি.সি স্কাউট, সমাজাসেবা ইত্যাদির মাধ্যমেও সহযোগিতা ও সমবেদনামূলক মনোভাব গড়ে তোলা যায়।
(৩) আত্মবিশ্বাস জাগরণ করাঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আত্নবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা যায়। আর এই আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে আসে আত্মনির্ভরশীলতা। শিশু গৃহপরিবেশে পিতা-মাতার উপর নির্ভরশীল থাকে। তারা ভিন্ন কাজের জন্য বিদ্যালয়ে এসেও যদি সে শিক্ষকের উপর নির্ভরশীল জীবনযাপন করে, তাহলে ভবিষ্যৎ সমাজ-জীবনে সে সার্থক নাগরিক হিসেবে বাঁচতে পারবে না। তাই বিদ্যারয়ের মধ্যেই তাকে এমন কিছু কাজ দিতে হবে, যে সব কিছুর সমাধানের মধ্যে দিয়ে তার আত্নবিশ্বাস (Self confidence) আসে সহপাঠ্যক্রমিক কাজ তাকে সেই সুযোগ দেয়।
(৪) সহযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করাঃ
বিভিন্ন ধরনের সহপাঠ্যক্রমিক কাজের মধ্যে দিয়ে শিশুদের পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিমূলক মনোভাবের বিকাশ হয়। এই সহযোগিতা ও সহানুভূতি সমাজ-জীবনের পক্ষে একান্ত প্রয়োজন। ছাত্রসংস্থার সভ্য হিসেবে, খেলার মাঠে, অভিনয়ে সে অন্যান্যদের সঙ্গে সহযোগিতার সঙ্গে কাজ করবে।
(৫) পাঠের একঘেঁয়েমি দূরীকরণ ও বিদ্যালয়ের প্রতি আকর্ষণঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কাজের মাধ্যমে বিদ্যালয়-জীবনকে ছাত্রদের কাছে সরস এবং সজীব করে তোলা যায়। সহপাঠ্যক্রমিক কার্যবলী বিদ্যালয়ে ঠিকমত পরিচালনা করলে বিদ্যালয়-জীবনে অনেক বৈচিত্র্য আসে এবং তার প্রতি শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হয়। এই সব কাজের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রতি আনুগত্যও বাড়ে এবং বিদ্যালয়ের প্রতি মমত্ববোধও (school spirit) জাগে।
(৬) শৃঙ্খলা স্থাপনে সহায়তাদানঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কাজের সুপরিচালনা করতে পারলে বিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা রক্ষার সমস্যারও সমাধান হয়। খেলার মাঠের নিয়ম-কানুন মেনে, সভার নিয়ম-কানুন অনুশীলন করে, বা অন্য যে-কোন ধরনের স্বাধীন কাজের মধ্যে নিযম-কনুন মেনে কাজ সম্পাদন করে শিশুরা স্বতঃস্ফূর্ত শৃঙ্খলার বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
(৭)শিক্ষামূলক নির্দেশনা দানের সুবিধাঃ
শিক্ষক যদি সচেতন হন, তাহলে শিক্ষার্থীরা বিশেষ কোন বিষয়ে দক্ষতা আছে বা ঝোঁক আছে, তা নির্ণয় করতে পারেন এই সহপাঠ্যক্রমিক কাজের মাধ্যমে ।এই সব তথ্য তার নিজের পাঠপরিকল্পনা রচনায় যেমন সাহায্য করবে, অন্যদিকে শিক্ষামূলক ও বৃত্তিমূলক নির্দেশনায় সহায়তা করবে।
(৮) দৈহিক ও মানসিক বিকাশ সাধনঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কাজের মাধ্যমে শিশুর দৈহিক বিকাশ ও মানষিক বিকাশ হয়। খেলাধুলা ইত্যাদির মাধ্যমে দৈহিক বিকাশ হয়। খেলাধুলা ইত্যাদির মাধ্যমে দৈহিক বিকাশ হয়। আবার বক্তৃতা, বিতর্ক-সভা ইত্যাদির মাধ্যমে দৈহিক বিকাশ হয়।
(৯) অবসর-যাপনের শিক্ষাঃ
সহপাঠ্যক্রমিক কাজের যে শিক্ষা শিশুরা বিদ্যালয়ে পায়, তা তার ভবিষ্যৎ জীবনে সুস’ভাবে অবসর যাপনে সহায়তা করে । অবসর-যাপনের শিক্ষা আধুনিক যান্ত্রিকএক বড় সমস্যা, সে সমস্যারঅনেকটা সমাধান হয়ে যায় বিদ্যালয়ে সহ পাঠ্যক্রমিক কাজের ব্যবস্থা করলে।
(১০) সেবামূলক মনোভাবের বিকাশঃ
সবশেষে বিশেষ কয়েক ধরনের সহপাঠ্যক্রমিক মাধ্যমে শিশুদের মধ্য সেবামূলক মনোভাব বিকাশহয়; যেমন-স্কাউট। চরিত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ দিকের বিকাশ খুব সহজে এই কাজের মাধ্যমে হয়।
স্কুলে প্রবর্তনযোগ্য সহশিক্ষাক্রমিক কার্যাবলীর তালিকাঃ
১. খেলাধুলা, ক্রীড়ানুষ্ঠান, সাঁতার প্রতিযোগিতা, আন্তঃস্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতা, স্কাউট, ব্লুবার্ড।
২. বিতর্ক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, নাট্যানুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান।
৩. উদ্যান রচনা, মৎস চাষ, সবজি বাগান তৈরি।
৪. নিরক্ষরতা দূরীকরণ, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ।
৫. বার্ষিক ম্যাগাজিন, দেয়াল পত্রিকা প্রকাশ, শিক্ষা সফর, জাতীয় দিবস পালন।